উখিয়ায় চোরাইমাল পাচারে দুই সম্রাট : মূলহোতা আবুল খাইয়ের

  • * তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এপার-ওপার

  • * রয়েছে মাদকসহ অন্যান্য একাধিক মামলা

  • * সীমান্তে কঠোর নজরদারী জরুরী

এম ফেরদৌস, উখিয়া :


সীমান্তঘেষা উপজেলা উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়াটি মায়ানমারের বর্ডার সাইড হওয়াতে মাদকসহ বিভিন্ন চোরাইমাল পাচারের সিন্ডিকেট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে নতুন করে আলোচনায় আসছে মাদক কারবারী আবুল খাইয়েরের নাম।

জানা যায়, আঞ্জুমানপাড়া এলাকার মৃত কলিম উল্লার ছেলে আবুল খায়ের ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মাদকসহ বিভিন্ন চোরাইমাল পাচারে বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তার রয়েছে মাদকসহ একাধিক মামলা।

আবুল খাইয়ের নতুন করে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে চাল,ডাল,তেল,অকটেন তেলসহ বিভিন্ন পন্য মায়ানমারে পাচার করে আবার সেখান থেকে মাদক ও অন্যন্য চোরাইমাল নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করছে এমন অভিযোগ তুলেছে স্থানীয়রা।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, আবুল খাইয়ের গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে ইয়াবার চালান নিয়ে ঢাকা যাওয়ার পথে কক্সবাজার বিমান বন্দর পুলিশে হাতে আটক হয়ে হাজত বন্দি হয়। দীর্ঘদিন হাজতে থাকার পর জামিনে বের হয়ে পুনরায় শুরু করেন মায়ানমারের কেন্দ্রীক অবৈধ ব্যবসা। বর্তমানে চোরাইমাল পাচার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তার বিশাল সিন্ডিকেট। তার প্রধান সহযোগী হিসাবে কাজ করছে পালংখালীর বাবুল মিয়ার ছেলে মানিকসহ অনেকেই।

স্থানীয়রা বলছে, আবুল খাইয়ের দুর্ধর্ষ চালাক প্রকৃতির লোক। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে সু-কৌশলে তার অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোর পদক্ষেপ নিলে বেরিয়ে আসবে তার অবৈধ ব্যবসার কর্মযজ্ঞ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আঞ্জুমানপাড়া এলাকার এক ব্যাক্তি জানায়, মৃত কলিম উল্লাহর ৪ ছেলে রয়েছে তারা সবাই ইয়াবা কারবারিতে জড়িত। তাদের প্রত্যেকের মাদকসহ অন্যান্য একাধিক মামলা রয়েছে। তারা সীমন্তের কাটাতারের বেড়া ঘেষে দিনের বেলায় অবস্থান নেয়, রাতে ইয়াবা চালান নিয়ে মৎস্য ঘের হয়ে আঞ্জুমানপাড়া এলাকায় ঢুকে। পরে সুযোগ বুঝে স্থানীয় এবং রোহিঙ্গা যুবক/যুবতির দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে থাকে।

তিনি আরো জানান, ২০১৮ সালের ৩১মে আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার চালান নিয়ে আসার সময় দেখে ফেলায় তার ভাতিজা জুহুর আলমকে কূপিয়ে হত্যা করেছিল সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনা বছরখানেক তোলপাড় ছিল এলাকায়। সেই ঘটনার মামলাও রয়েছে উখিয়া থানায়।

এসব বিষয়ে আবুল খাইয়ের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মিয়ানমারের কাছাকাছি সীমান্ত উপজেলা হওয়ার কারনে উখিয়ায় ইয়াবা ও মাদকের বড় চালান অনেকটা কমলেও অবৈধভাবে বিভিন্ন চোরাইমাল পাচার এখনো বন্ধ হয়নি ।

আবার নতুন করে পাচার হওয়া শুরু হয়েছে বাংলাদেশি বিভিন্ন পন্য। সেই পন্যের বিনিময়ে মায়ানমার থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসছে সিগারেট, ক্যালসিয়াম, রিচকপিসহ, অন্যন্য চোরাইমালগুলো। এসব পন্যের পাচার বিনিময়ের প্রধান এলাকা হিসাবে রয়েছে পালংখালী আঞ্জুমান পাড়া ও তুম্ব্রু সীমান্ত। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা এসব পাচার বিনিময় ব্যবসার লেনদেন ঘটাচ্ছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে এসব বন্ধ হবে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় সচেতন ব্যাক্তিবর্গরা।
অবৈধ এসব চোরাইমাল পাচারের লেনদেনে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সুত্রমতে, ২০১৭সালে আগস্টের পরে মিয়ানমার থেকে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে। তাই এই সীমান্তের এপার আর ওপার তাদের কাছে পরিচিত। এর সুবাধে তারা সহজেই এসব অবৈধ পাচার লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীর স্পষ্ট বানী, পালংখালীতে প্রত্যেক মাদক ব্যবসায়ী রোহিঙ্গাদের দিয়া পাচার কাজ করাচ্ছে। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে রোহিঙ্গাদের কাজে লাগিয়ে এপার ওপার সামলিয়ে নিচ্ছে। সেখানে আটক হলেও সামান্য পাচারকারী আটক হয় রাঘববোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।

এদিকে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শামীম হোসেন বলেন, ইয়াবা ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান আছে। ইয়াবা ও মাদক কারবারি যে হোক না কেন তাকে ছাড় দেওয়া হবেনা। পাশাপাশি নতুন করে দেশীয়পন্য পাচারের বিষয়ে নজর বাড়াচ্ছি। এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।